Tuesday, December 10, 2013

গল্প একটি স্বপ্ন নিয়ে

কোনকিছু না ভেবেই গত ১৩ নভেম্বর হঠাৎ করেই এই গল্পটা লেখা শুরু করেছিলাম । এরপরে আর হাঁত দেয়া হয়নি । ভাবছিলাম আমার অনেক চিন্তা আর প্লটের মত এই জিনিসটাও বোধ হয় কালের গভীরে হারিয়ে যাবে । কিন্তু আজ হটাৎ করেই মনে হল, গল্পের শেষটা বোধহয় আমি পেয়ে গেছি !! আর তাই দেরি না করে শেষ করে ফেললাম ।

::::  ::::
            গতকাল রাতেও বরাবরের মতই ঘুমাতে দেরি হয়েছে রাজীবের ! সেই সাথে শরীরটাও ভাল না !! ফলাফল সকালে ঘুম থেকে উঠতে আজ দেরি হয়েছে । কেন জানি না আজকের দিনের শুরুটা অন্যরকম লাগছে তার কাছে । ঘুম থেকে উঠেই মনে পড়ল গতকাল রাতের স্বপ্নটার কথা , আজিব তো !!! এই স্বপ্ন তো তার দেখার কথা নয় ,কতদিন...... কতদিন পর মনে পড়ল এইসব কথা । আসলে বাস্তব আর স্বপ্নের মাঝে অনেক পার্থক্য আর তাই স্বপ্ন দেখা সে ছেড়েই দিয়েছে, কিন্তু এ তো এক অনাকাঙ্খিত স্বপ্ন !!! এই সব ভাবতে ভাবতেই নাস্তাটা সে সেরে ফেলল..নাহ ! দিনটা অন্যরকম লাগলেও নাস্তাটা আজও বরাবরের মতই, কোন “ডিফারেন্স’ নেই ! আসলে তার একটা পরিবর্তন দরকার সত্যিই খুব খুব করে দরকার । নাস্তা করার পর বাসায় থাকায় আর কোন মানে হয় না । বের হওয়ার সময় মায়ের উপদেশগুলো আবছা আবছা কানে আসলেও তার মাথায় তখন বন্ধুদের চিন্তা , রহমতের চায়ের দোকানে তারা তার জন্য অপেক্ষা করছে ....

রাস্তার মোড় আসতেই প্রথম রাহাত,সুমন আর মিলনের সাথে দেখা ।
সুমনই প্রথম কথা বলল, কি দোস্ত ! তোকে আজ অন্যরকম লাগছে !!
আরে নাহ !! এক রাতেই আমি কি বদলে গেলাম নাকি ? উত্তর করলেও রাজীবের আবারও গতরাতের স্বপ্নটার কথা মনে পড়ল !!
      চারজন মিলে একসাথে বসে রহমতের আদা চাঁ আর দিনের প্রথম ধুম্র শলাকাতে আগুন দিয়ে শুরু হল গতানুগতিক আড্ডা ! কিন্তু তাদের কোন কথাই রাজীবের কানে প্রবেশ করছে না । সিগারেটের ধোঁয়াগুলোর মতই একটার পর একটা চিন্তা তার মাথায় পাক খেতে শুরু করেছে, পার্থক্য শুধূ ধোঁয়াগুলো পাক খেতে খেতে উড়ে গেলেও চিন্তাগুলো তার মাথাতেই জট পাকাচ্ছে ।

এমন সময় নাহিদ এসে দোকানে ঢুকেই চায়ের জন্য একটা হাকঁ ছাড়ল ।

আসলে সকাল বেলা রহমত এর লেবু চাঁ ছাড়া তাদের দিনের শুরুটা চিন্তাও করা যায় না। রহমতের লেবু চায়ের সাথে একটা গোল্ডলিফ না হলে দিনটা  যেন শুরু হয়েছে বলে মনে হয় না । 
ইতিমধ্যে আড্ডাটা জমে উঠেছে ।
আলোচনার বিষয়বস্থু বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ । সবাই আফগানিস্থান আফগানিস্থান  করে চিল্লাছে ! রাজীব এতক্ষন চুপচাপ থাকলেও হঠাৎ বলে উঠল
- আফগানিস্থান নিয়ে এত কথা বলার কি আছে ? এত এত কথায় চাপটা বাড়ছে আর শেষ পর্যন্ত চাপটাই না আমাদের জন্য কাল হয়ে যায় ।
 সুমন বলল, ঠিক বলেছিস দোস্ত । এটা নিয়ে এত চিন্তার কিছু নেই নিজের খেলা খেলতে পারলে আমরা এমনিতেই জিতব।
  হঠাৎ নাহিদ রাজীবের কথায় টপিকটা চেঞ্জ হয়ে গেল । সে তার  দিকে তাকিয়েই বলে উঠল “কিরে দোস্ত ! আজ তোরে এমন বিষন্ন লাগছে কেন ?
রাহাত বলল, পুরান কথা নাকি বস ?
মিলনটাও বরাবরের মত টিপ্পনি কাটতে ছাড়ল না “ শালা মাইনষে ১০টা ১২ টা প্রেম করে আর তুই আছস ওই একখান নিয়া, ডিজিটাল যুগের মানুষ হইয়াও শালা এই ক্ষেত্রে তুই এখনও এনালগ “
নাহিদ শান্তনা দেয় “ পুরান কথা ভেবে কি লাভ দোস্ত !
 “হ পুরানই তো ” রাজীব ভাবে । আহা কি সব দিন ছিল তখন,এখনও ভাবতেই রক্তে এড্রেনালিন এর প্রবাহ বেড়ে যায়।    
  টগবগিয়ে উঠে রক্ত ।
  কিন্তু কিছু ভুল আর … নাহ ভাবতে ইচ্ছা করে না আর । কিন্তু তারপরও এই এতদিন পর কেন এই স্বপ্ন ? মাঝে মাঝে মনে খোচাঁ দিলেও সে তো সবকিছু প্রায় ভুলতেই বসেছিল ।
এইসব নিয়া অতীতে বন্ধুদের অনেক খোচাঁ সহ্য করতে হয়েছে তাই সেসব আর বলতে চায় না । এমনকি অনেক বন্ধুর সাথে এ নিয়ে তার সম্পর্কটাও প্রায় নষ্ট হতে বসেছিল ।
আবারও সবাই ক্রিকেটের আড্ডায় মত্ত ।
কাউকে কিছু না বলেই হঠাৎ বের হয়ে আসল  রাজীব, পিছন থেকে সুমন ডাকলেও ,কোন জবাব না দিয়েই উদ্দেশ্যহীন ভাবে  হাটঁতে থাকল সে ।
  পিছন থেকে ওরা চারজন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলেও  রাজীবের মাথায় তখন শুধু রাতের সেই স্বপ্নটা !!
উদ্দেশ্যহীনভাবে বের হয়ে আসলেও ঠিক কিভাবে যে রাজীব হুদা মিয়ার পুকুরঘাটে পৌছাঁল বলতে পারবে না ।
এই পুকুরঘাটটা তার খুব পছন্দ ।
চারপাশে অনেক গাছপালা আর নির্জন পরিবেশ হওয়াতে এখানে এলে প্রকৃতিকে উপভোগ করা যায় । তার মন খারাপ হলেই সে এখানে চলে আসে ।
দুপুরের কাঠফাটাঁ রোদ্দুরে আশপাশটা জ্বলছে বলে মনে হলেও  প্রকৃতি তার ছায়াঁ দিয়ে পুকুর পারটিকে শান্ত আর ঠান্ডা করে রেখেছে । রাজীবের মনে হল পুকুর পাড়ের সবুজ ঘাসগুলো যেন তার বসার জন্যেই গালিচা মত হয়ে আছে ।

বসতে বসতে রাজীব ভাবে এবার অন্তত বিষয়টা নিয়ে একটু চিন্তা করা যাবে ।ব্যাপারটা এখনও তার  মাথাতেই আসছে না।
 এও কি সম্ভব ! এটা কি কখনও হতে পারে ?
এমনিতে সে স্বপ্ন খুব একটা দেখে না, অনেক সময়  জোর করে স্বপ্ন দেখার চেষ্টাও করেছে । যেসব কথা মনে পড়লে এখনও তার হাসিঁ পায় । কলেজে থাকতে বন্ধুরা কত কিছু নিয়েই না স্বপ্ন দেখত অথচ সে চেষ্টা করেও একটা স্বপ্ন দেখতে পারত না ।

সেই সময় তার প্রেমটাও ছিল উত্তাল !
ও তাকে প্রায় প্রায় প্রশ্ন করত , এই তুমি আমাকে নিয়ে কি কোন স্বপ্ন দেখনা ?
তার বান্ধবীর “সে” নাকি অনেক সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন দেখে তার বান্ধবীকে শোনাত আর তার বান্ধবী আবার তাকে শোনাত । এখন তার বান্ধবীকে শোনানোর জন্য হলেও তাকে স্বপ্ন দেখতেই হবে ।
রাজীব ছিল মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান,বাবার পাঠানো হিসেবের টাকায় কোনমতে মাস চলে যায় তথাপি তার কাছে স্বপ্ন দেখার চাইতেও প্রেমিকা  আর তার বান্ধবীকে হোটেলে একবেলা খাওয়ানোও তার জন্য ছিল অনেক সহজ কাজ । কিন্তু প্রেমিকার একদাবী তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেই হবে ।
এসব ভাবতে ভাবতে হাসিঁ পায় রাজীবের !
প্রেয়সীর চাপে স্বপ্ন দেখার জন্য কি প্রানান্ত চেষ্টাটাই না সে সময় করেছে ।

ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন  জিনিসটা সত্যি রাজীবের কাছে অবাক করার একটা বিষয় এবং কিছুটা রহস্যজনকও । সে একেবারে স্বপ্ন দেখে না তা নয় কিন্তু আজ পর্যন্ত যে কবার দেখেছে পরে হুবুহু সেটাই বাস্তবে পরিনত হয়েছে ।
সমস্যাটা সেখানেই !
গতরাতে সে যা দেখেছে সেটা কি বাস্তবে সম্ভব ?
আবার ভাবে কেন সম্ভব নয় ? মন থেকে সকল দোদুল্যতাটাকে ঝেরে ফেলে রাজীব । অবশ্যই সম্ভব !!
সে যা স্বপ্নে দেখে বাস্তবে তাই ঘটে এটাই রাজীবরে স্বপ্নের স্পেশালিটি । কজনই বা পারে তার মত স্বপ্ন দেখতে ।
এসব ভাবতে ভাবতেই ফোনটা বেজে উঠে রাজীবের ।
 মায়ের ফোন ।
 উঠে দ্বাড়ায় রাজীব ,কখন যে বেলাটা গড়িয়ে গেছে টেরপায় নি,মা ফোন করাতেই মনে পড়ল বাসায় ফিরতে হবে ।

 পড়ন্ত বিকেলে বাসার উদ্দেশ্যে হাটঁতে থাকে রাজীব ,আবারও মনে  পড়ে স্বপ্নটার কথা । সেই জায়গা যেখানে প্রায় এক  বছর আগে গিয়েছিল সে, হাজার হাজার নাম না জানা অচেনা মানুষের কাধে কাঁধ মিলিয়ে গলা ফাটিঁয়ে চিৎকার করেছিল । স্লোগান দিয়েছিল !!!
  সেই জায়গায় আবারও হাজার হাজার মানুষের সাথে দাড়িঁয়ে আছে সে । সামনে ফাসিঁর মঞ্চ । আজ ফাসিঁ হবে , বিশেষ একজনের ফাসিঁ !!!