Monday, November 2, 2015

বিস্ময়কর হামহাম ঝর্না

বেড়ানোটা আমার নেশাই বলা যায় ! ঈদের আগে থেকে একের পর এক ট্যুর মিস হওয়ার পর কিশোর ভাইকে বলেছিলাম ১৫-১৭ তারিখের মধ্যে কিছু করা যায় কিনা ? অবশেষে সিদ্ধান্ত হল সিলেট যাওয়া হবে । হামহাম জলপ্রপাত,রাতারগুল আর তার সাথে বিছনাকান্দি ।বৃহস্পতিবার রাত ১১ টায় সায়েদাবাদ থেকে গাড়ির টিকিট কাটা হল।আমাকে যেতে হবে রংপুর থেকে তাই বৃষ্টিতে ভিজে দুপুর ১ টার গাড়িতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম কিন্তু ড্রাইভার এত আস্তে গাড়ি চালাচ্ছিলেন যে যমুনা সেতু পৌঁছার পর আমার টেনশন শুরু হল সময়মত পৌছাতে পারব তো ? একবার ড্রাইভারকে বলায় উনি আমাকে বললেন “আমি উঠি আপনি এসে গাড়ি চালান ” এরপর আর কোন কথা থাকতে পারে না !!! তাই বসে বসে নিজের চুল ছেড়া ছাড়া কোন উপায় ছিল না ,এদিকে ট্যুরমেটদের একের পর এক ফোন ! রাত ১০টাতেও যখন উত্তরাতে তখন কিশোর ভাই বললেন- “গাড়ি ১১ টায় , কেমনে কি করবেন বাকিটা আপনার” মহাখালিতে নামার কথা থাকলেও খিলেক্ষেতে নেমে সিএনজিওয়ালারে বললাম,সায়েদাবাদ যেতে কতক্ষন লাগবে ? উনি বললেন - জ্যাম না হলে ১ ঘন্টা । আমি বললাম ১১টায় আমার গাড়ি আছে,হাতে সময় আছে ৪৩ মিনিট সময় মত পৌছাতে পারলে যা ভাড়া চাইবেন তাই দেব । মামা আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যখন সায়েদাবাদে নামিয়ে দিলেন ঘড়িতে তখন কাটাঁয় কাটাঁয় ১১ টা । তার চাহিদা মত ৩০০ টাকা আর বাড়তি একটা ধন্যবাদ দিয়ে দুপা বাড়িয়েই যখন পরিচিত কিছু মুখের দেখা পেলাম তখন অনুভুতিটা ছিল অসাধারন । ভাবলাম ১০০ মিটারে জেতার পর উসাইন বোল্টেরও বোধহয় ঠিক এমনই অনুভতি হয় । অতঃপর বাসে শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশ্যে যাত্রা, পুরো রাস্তায় চাদেঁর আলো আমাদের কাউকেই ঘুমাতে দিল না ,যদিও মাঝে কিশোর ভাইয়ের হালকা একটু নাক ডাকার শব্দ শোনা গিয়েছিল মাত্র রাত ৪ টায় শ্রীমঙ্গলে নেমে রাস্তাতেই ২ ঘন্টা আড্ডা দিয়ে কাটিয়ে দিলাম । সকাল ৬ টায় চললাম আগে থেকেই ঠিক করা হীড বাংলাদেশের একটা গেস্ট হাউসে । সেখানে ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ রেখে ২টা সিএনজিতে আমরা ৮ জন চললাম হামহামের উদ্দেশ্যে , সাথে ছিলেন কিশোর ভাই, আল হাসান ভাই,কবীর ভাই ,শাহেদ ভাই,ডাঃ নাদিয়া আপু, নওরীণ আপু আর ইমু আপু । কলাবন পর্যন্ত সিএনজি তে গিয়ে শুরু হল পায়ে হেঁটে যাত্রা , চা বাগানের ভিতর দিয়ে চলা কাদাঁ মাখা পিচ্ছিল আর আকাঁবাকা পথে প্রায় ১ ঘন্টা হেটে পাহাড়ের কোলে শেষ গ্রামটায় পৌছেঁ গাইড, প্রয়োজনীয় পানি,শুকনো খাবার আর এক কাদিঁ কলা নিয়ে নিলাম। এর আগেই অবশ্য সবার হাতে স্থানীয় পোলাইনের কাছ থেকে ৫ টাকায় কেনা একটা করে লাঠি শোভা পাচ্ছে ।
 পাহাড়ে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ল শুধু মানুষ আর মানুষ !! ছোট খাট কয়েকটা টিলা পার হলাম ,মাঝে মাঝে গাছ আর বাঁশ দিয়ে তৈরি সাকোঁ গুলো পাড় হতে রীতিমত ট্রাফিক জ্যাম লেগে যাচ্ছিল কিন্তু প্রথম সাকোঁ দুটো পার হতেই কিছু ট্যুরিষ্ট এর জান খারাপ, ট্রাফিক জ্যামের কারনে আমাদের দল টা ইতিমধ্যে ৩ ভাগে ভাগ হয়ে গেছে । শেষে ৩ জনকে রেখে আমি , হাসান ভাই আর শাহেঁদ ভাই রীতিমত দৌড়ে পাহাড়ে উঠে অগ্রবর্তী দল নাদিয়া আর কবীর ভাই এর সাথে জয়েন করলাম। প্রায় ঘন্টা খানেক ট্র্যাকিং করে আমরা যখন মোকাম টিলার পাদদেশে পৌছঁলাম তখন বেশির ভাগ ট্যুরিষ্টই দুর্গম পথ আর ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যাবে বলে ফিরতি পথ ধরেছে । তাদের জন্য কষ্ট হচ্ছিল কে জানে কত দূর থেকে, কত আশা নিয়ে মানুষগুলো এসেছিল হামহাম দেখবে বলে কিন্তু এই বিপদ সঙ্কুল পথ তাদের এ্যাডভেঞ্চারটাতে পানি ঢেলে দিল কিন্তু বিপদ না থাকলে যে কোন এ্যাডভেঞ্চার নাই এইটা তাদের কে বোঝাবে ? বেচারারা হয়ত শখের মাথায় চলে এসেছে ! এক জোড়া নব দম্পতিকে দেখলাম , তাদের যাওয়ার কথা মাধবকুন্ডু সিএনজিওয়ালা ভুলে নিয়ে এসেছে হামহামে আপা শুধু এক পা করে উপরে উঠে আর গজরায় “ যাওয়ার কথা মাধব কুন্ডু আর নিয়ে এল কোন হামহাম না জামজাম ” কিছুক্ষন পর দেখি তারা ফিরে আসছে আর এবার ভাইজান গজরাচ্ছে “ বুঝি না মানুষ কেন এত টাকা খরচ করে এত কষ্ট করে এসব জায়গায় আসে “। এরপর আপা আর ভাইজানের মাঝে কি ঘটছে সেটা একমাত্র উপরওয়ালাই জানে !!! যাইহোক আমাদের টিম তখন ২ ভাগে বিভক্ত সামনে আমরা ৫ জন আর পিছনে কিশোর ভাই, নওরীন আপু আর ইমু আপু । ফিরতি পথের প্রায় সকলকেই আমরা বলছিলাম আমাদের টিমের বাকি ৩ জনকে যেন ফিরে যেতে বলে । কারন আমরা নিশ্চিত ছিলাম যে,তাদের পক্ষে আর আসা সম্ভব হবে না । প্রায় ৩ ঘন্টা হাটাঁর পর আমরা এমন একটা জায়গায় পৌছলাম যেখানে যতদূর পর্যন্ত চোখ যায় পথটা শুধু নেমেই গেছে ! পুরা খাড়া একটা ট্রেইল , সাপোর্ট নেয়ার মত কিছু নেই আর পুরোটাই কর্দমাক্ত , নিচে পরে গেলে নিশ্চিত মুত্যু না হলেও হাড়হাড্ডি আস্ত থাকবে না । দুরুদুরু বুকে শুরু হল নামা , দুই একজনের ধুপধাপ শব্দ হলেও তারা পিছলে পরেও আটকে গেলেন ।শাহেদ ভাই তো পিচ্ছিল কাদাঁয় পড়ে গিয়ে শাঁ শাঁ করে নেমেন গেলেন আর আমি কতক্ষনে নেমেছি বলতে পারব না কিন্তু অবশেষে দেখলাম দাড়িয়ে আছি খরস্রোতা একটা ঝিড়িতে । সবাই নিজেদের শরীরে খোজাঁখুজি করছে জোঁক ধরেছে কিনা ? আমার ২ টা জোঁক ধরে কখন যে রক্ত চুষে পড়ে গেছে বুঝতে পারি নাই। ডাক্তার নাদিয়ার হাতের এক খাবলা মাংস পিন্ড উল্টে গেছে । ঝিড়ির পানিতে কাদাঁ ধুয়ে মুছে , আমার ব্যাগে থাকা হালকা ঔষধপত্রে ডাক্তার এর ড্রেসিং করে শুরু হল ঝিড়ি পথে যাত্রা । আমরা তখন শব্দ শুনতে পাচ্ছি, ঝর্নার পানি পড়ার শব্দ। সেটা যেন আমাদেরকে চুম্বকের মত আকর্ষন করছে । যতই এগুতে থাকলাম পানির গর্জন ততই বাড়তে থাকল । প্রায় আধ ঘন্টার মত কখনও হাটু সমান আবার কখনও বুক সমান পানি দিয়ে হেটেঁ একটা বাকে পৌছলাম , বাকঁ পাড় হতেই সেই মূহূর্ত !! আহা !! এটার জন্যই এত কষ্ট,এতদূর থেকে আসা । আমি প্রায় ৫ মিনিট পুরো ঠায় হয়ে দাড়িয়ে থাকলাম । সম্বিত ফিরতেই ইয়াহু বলে চিৎকার । ঝর্না এত সুন্দর আর বড় হতে পারে আমার কল্পনাতেও ছিল না । ঝর্নায় তখন টুরিষ্ট প্রায় নেই,আমরা গোসল সারতে সারতে দেখি অল্প যে কজন ছিলেন তারাও ফিরে গেলেন । হাসান ভাই তারা দিচ্ছিলেন কিন্তু আমাদের লাফালাফি শেষ হচ্ছিল না । আমার সবেধন নীলমনি ক্যামেরায় ছবি টবি তুলে ফেরার আগে চা খেতে বেসলাম । হ্যাঁ সেই সূদুর হামহামেও চা পাওয়া যায় , মানুষ ব্যবসাটা ভালই বোঝে । আমাদের টিমের সবার গায়েই একই রকম টিশার্ট ছিল । চা খেতে খেতে স্থানীয় একজন বলল, আমাদের দলের একজন মেয়ে একাই আসতেছে তাকে হেল্প করছে তাদেরই স্থানীয় অপর একজন ভাই , টিশার্ট দেখেই সে বুঝতে পেরেছে মেয়েটা আমাদের দলের।। কথাটা শুনে আমরা সবাই স্থম্ভিত হয়ে গেলাম ।বর্ননা শুনে বোঝা গেল সেটা নওরীন আপু । কিছুক্ষন পর নওরীন আপুকে দেখে সবার তো চোখ কপালে বিশেষ করে হাসান ভাই তো পুরাই থ । বেচারা চা খেতে পর্যন্ত ভুলে গেলেন !! আমি চা নিতে বলায় আমারে রীতিমত একখান ঝাড়ি দিলেন । নওরীন আপুরে কিছুক্ষন সময় দেয়া হল গোসলের জন্য , এই সুযোগে হাসান ভাই ছাড়া আমরাও আবার নেমে পড়লাম। আমি ওনাকে বললাম এতদূর কষ্ট করে আসলেন আগে ৫ মিনিট ঝর্নাটার দিকে চুপচাপ দাড়িয়ে থেকে ফিল করেন । ভাল লাগবে । ছবিটবি তুলে ঘোরলাগা একটা অনুভুতি নিয়ে শুরু হল ফিরতি পথে যাত্রা, আধ ঘন্টা হেটে মোকাম টিলাম গোড়ায় পৌছলাম কিন্তু কে জানত এইবারের ট্রিপটা বিষ্ময়ের ঝাপি খুলে বসেছে । মোকাম টিলার গোড়ায় আসতেই চোখে পড়ল টিমের বাকি ২ জন মেম্বারও হাজির । ঝর্নায় তখন আর কেউ নেই,সবাই তখন ফিরে গেছে কিন্তু এতকষ্ট করে এতদূর আসার পর মাত্র ৩০ মিনিট দুরত্বের জিনিসটা না দেখে ফিরে যাওয়া একটা অন্যায়ই বটে তাই আমরা আবারও ২ ভাগে ভাগ হয়ে গেলাম ।সিদ্ধান্ত হল হাসান ভাই নাদিয়া আর নওরীন আপুরে নিয়ে উপরে উঠবে আর আমি ,শাহেঁদ ভাই ও কবীর ভাই কিশোর ভাইদের সাথে নিয়ে আবারও ঝর্নায় ফিরে যাব । আমাদের সাথে থাকল ২ গাইড আর কিশোর ভাইদেরকে সাহায্য করা স্থানীয় ২জন উদয় ভাই আর জলিল ভাই । আবারও ঝর্নায় ফিরে কিছুক্ষন সময় অতিবাহিত করে আমরা ফিরতি পথ ধরলাম , বেশিক্ষন থাকার উপায় ছিল না কারন ততক্ষনে অন্ধকার নামা প্রায় শুরু হয়ে গেছে । ফেরার পথে বুঝতে পারলাম যে,কখন যেন আমার হাটুটা পাথরে বারি খেয়েছে তাই অল্প বিস্তর ব্যাথা করা শুরু হয়েছে । ব্যাথা নিয়েই ফিরে আসা শুরু করলাম। ঝিরিপথ শেষে মোকাম টিলার গোড়ায় পৌছায় পর শুরু হল উপরে উঠা। সামনে আমি,কবীর ভাই আর যাদব ভাই , মাঝে শাহেদঁ ভাই আর জলিল ভাই । আর শেষে আমাদের ২ গাইড ও ইমু আপু এবং সবার শেষে কিশোর ভাই । সারাদিন মানুষের পদচারনায় কাদাঁ হয়ে উঠেছে থকথকে পিচ্ছিল তাই কখনও সাইড দিয়ে নতুন ট্রেইল বানিয়ে আবার কখনও গাইডের হাতে থাকা দাঁ দিয়ে নতুন গর্ত করে আমাদের নামতে হচ্ছিল । কিছুদুর আসার পর শুরু হল আর এক সমস্যা অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না ।ভাগ্যিস আমি যাওয়ার সময় ব্যাগে টর্চ টা নিয়ে ছিলাম, সেটাই পিছনে কিশোর ভাইয়ের হাতে দিয়ে দিলাম আর সামনে আমরা ৩ জন প্রায়ান্ধকারে নামতে থাকলাম কিন্তু এভাবে কিছুদুর চলার পর অন্ধকারের জন্য আর এগুনো সম্ভব হল না । ব্যাগ থেকে কবীর ভাইয়ের ফ্ল্যাশওয়ালা মোবাইলটা বের হল । আমার হাটুর ব্যথাও তখন চরমে, ব্যাগে থাকা পেইন কিলার বাম লাগিয়ে নিলাম আর সাথে ঝিরির পানি দিয়ে একটা পেইন কিলারও গিলে ফেললাম । আবার শুরু হল নতুন করে পথ চলা , নামছি তো নামছিই , এর যেন কোন শেষ নেই । মাঝে মাঝে নিজেদের মাঝে হাক ডাক করে আমরা নিজেরাই সাহস নিচ্ছি । কিন্তু শুরুর সেই ব্রীজের যেন কোন দেখা নেই । চলার গতি হয়ে পড়েছে অত্যন্ত স্লো , কবীর ভাই তার মোবাইলের ফ্ল্যাশ দেখালে যাদব ভাই ২ পা এগিয়ে থেমে পড়েন , এরপর কবীর ভাই নিজে ২ পা নামেন তাপর আমাকে লাইট দেখালে আমি ২ পা নেমে থেমে পড়ি । এরপর আবার শুরু হয় এই থামা আর চলার চক্রাকার বিরাম হীন পথচলা । চলার পথেই আমাদের নিজেদের মাঝে চিৎকার করে কথোপকথন ছাড়াও পিছনে ধুপধাপ শব্দ হচ্ছিল । এই শব্দগুলোর মূল উৎস ছিলেন শাহেদ ভাই , একদিনে পড়ার কোন রেকর্ড থাকলে সেটা নিশ্চিত শাহেঁদ ভাইয়ের হয়ে যেত হাতে বিশাল একখান দাঁ নিয়ে তিনি যেভাবে পড়ছিলেন সেটা রিতীমত বিপজ্জনকও ছিল ।

ইতিমধ্যে আমার পা সোজা হয়ে গেছে মানে বাকানোঁ যাচ্ছিল না, লাঠি হাতে বলা চলে একপায়ে নেমে যাচ্ছি । কিন্তু কাউকে বলতেও পারছিলাম না কারন সবার অবস্থাই ছিল শোচনীয় । একবার অন্ধকারেই বুঝলাম কব্জির কাছে একটা জোঁক নড়াচরা করছে । হাটতে হাটতেই সেটাকে টেনে ছাড়ালাম । তবে জোঁকের চাইতেও হাতি পোকার কামড়টা ছিল অসহ্য । গায়ে পড়েই ইয়া মোটা একটা সূচঁ যেন ফুটিয়ে দিত আর কিছুক্ষনের মধ্যেই জায়গাটা ফুলে লাল । এতকিছুর সাথে ঝাকঁ ঝাকঁ মশার কামড় ছিল একদম ফ্রি । প্রায় ৩ ঘন্টা চলার পর অবশেষে আমরা সেই প্রথম ব্রীজটার কাছে পৌছলাম কিন্তু বিধিবাম । কে যেন সাকোঁটা ভেঙ্গে রেখে গেছে , বাধ্য হয়ে আবার ও টিলা বেয়ে উপরে উঠে নতুন একটা রাস্তা দিয়ে আসতে হল। ইতিমধ্যে গ্রাম থেকে আর একজন গাইড মশাল নিয়ে আমাদের খুজঁতে খুজঁতে হাজির ,তিনি সামনে থেকে আমাদের কে নিয়ে গ্রামে পৌছলেন ।
সবগুলো ফোনই আমার ব্যাগে ছিল ,সেখানে পৌছে দেখি প্রতিটা ফোনেই অসংখ্য মিসকল , দেখা হল টিমের বাকি ৩ জনের সাথে । সেখানে কাদাঁমাটি কিছুটা পরিস্কার করে আরও প্রায় ঘন্টাখানেক হেটেঁ সিএনজির কাছে পৌছলাম। তারপর রাত প্রায় ১১ টার দিকে রেস্ট হাইসে পৌছে শুরু আর একবার খোঁজ দি সার্চ জোঁকের জন্য আর একদফা তল্লাশি । তারপর গ্রোগাসে ভাত, সবজি আর মুরগী গিলে , রাত ২ টায় দিলাম একটা ঘুম । এত কষ্টের ট্রিপটার সবচেয়ে বড় সার্থকতা যে , সেদিনের প্রায় শ দেড়েক ট্যুরিষ্টের মধ্যে শুধু আমাদের টিমের ৮ জনই হামহামে যেতে পেরেছিল আর বাকি সবাই ফেরত এসেছিল । সেদিন অনেকের সাহায্যই আমাদেরকে নিতে হয়েছে তবে অপরিচিত সেই ছেলেদুটো আমাদের যে উপকার করেছে তা ভোলার নয় । এদের দুজনই এখন আমার ফেসবুক বন্ধু , এই লেখার মাধ্যমে তাই তাদেরকে আরও একবার ধন্যবাদ দিচ্ছি । অসাধারন একটা ট্রিপ ছিল , ছিল কষ্ট আর অনেক অনেক ভাল লাগা কিন্তু এত ভাললাগার মাঝেও কিছু খারাপ লাগাও ছিল । চলতি পথের ট্রেইলটাতে চোখে পড়েছে অস্যংখ বর্জ্য। চিপস, পানির বোতল, ক্যান এমনকি বিরানীর প্যাকেটও । যারা বিরানী খেতে চান তাদের বলব ভাই এত কষ্ট করে হামহামে গিয়ে বিরানী খাওয়ার কি দরকার সেটা খেতে হলে অভিজাত কোন রেস্টুরেন্টে বসে খান আর যদিওবা সাথে করে বিরানীর প্যাকেটটা নিয়েই গেছেন খাওয়ার পর প্যাকেটটা আনতেও নিশ্চই কষ্ট হওয়ার কথা নয় । মূল কথা যারাই যান দয়া করে আশেপাশের পরিবেশের কোন ক্ষতি করবেন না বা কোন বর্জ্য পদার্থ সেখানে ফেলে আসবেন না ।
কিছু কথাঃ যদি কেউ হামহাম যেতে চান আর এ্যাডভেঞ্জার  প্রিয় হন তবে বর্ষাকালেই তার যাওয়া উচিত, তবে অবশ্যই সকাল সকাল বের হবেন আর বিকাল ৩ টার মধ্যে ঝর্না থেকে ফিরতি পথ ধরার চেষ্টা করবেন ।
যথেষ্ঠ শারিরীক আর মানসিক ভাবে ফিট না হলে তার যাওয়া উচিত নয় ।
সবচেয়ে বড় কথা পরিবেশের কোন ক্ষতি করা যাবে না, মনে রাখবেন যতটুকু ফেরত আনতে পারবেন ঠিক ততটুকুই আপনার নিয়ে যাওয়া উচিত ।