Sunday, September 10, 2017

রোহিঙ্গা সমস্যা ও বাংলাদেশ

প্রতিদিন টিভিতে রোহিঙ্গাদের অসহায় অবস্থা দেখে মনে হয় মানবিকতার আজ কোথায়  -_-  কোন সন্দেহ নেই যে,রোহিঙ্গাদের উপর স্মরনকালের ভয়াবহ অত্যাচার মানবতার চরম লঙ্ঘন । মানবিক দিক বিবেচনা করে অনেকেই সীমান্ত খুলে দিতে বলেছেন ।সত্যি বলতে রোহিঙ্গাদের জন্য সবসময় অলিখিতভাবে সীমান্ত খোলাই থাকে ,না হলে এই অল্পকদিনে প্রায় ৩ লক্ষ্য রোহিঙ্গা প্রবেশ করতে পারতো না ।  আর এই সমস্যাটা আজকের না । সেই ১৯৭৭ সাল থেকে রোহিঙ্গারা এদেশে আসতে শুরু করেছেন । তারা আসে কিন্তু যাওয়ার কোন নাম নেই -_- মিয়ানমার সেনাবাহীনি যেমন তাদের  পুশইন করছে তেমনি  তাদেরও একবার আসলে আর ফেরার ইচ্ছা করে না ।দেশে অনেকেই তাদের প্রতি মানবিক হতে বলছেন,সব স্বাভাবিক মানুষ তাই বলবেন । ভয় লাগে তখনই ,যখন দেখি সেই মানবিকতা ধর্মভিত্তিক । মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দ্বাড়ানো সবার কর্তব্য । অবশ্য মানবিকতা আর জাতীয়তার টানা পোড়েনে আমি নিজেই সন্দিহান কি করা উচিত । কারন নিয়ন্ত্রন করতে না পারলে  ভূরাজনৈতিকভাবে গুরত্বপূর্ন আমাদের পার্বত্য অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের এই সংখ্যাবৃদ্ধি হতে পারে  আশংকার কারন । জাতিগতভাবে আমরা নিজেরা চরম বিশৃঙ্খল কিন্তু রোহিঙ্গারা আমাদের থেকেও এককাঠি সরেস । রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কিকি ঘটে তা যারা আশেপাশে থাকেন তারা ভালোই জানেন । এরা সীতাকুন্ডের বিশাল ঝাউ বাগান উজার করে ফেলেছে,বাড়িঘর তৈরি করছে পাহাড়-টিলা কেটে , যুক্ত হচ্ছে নানা অপরাধ কর্মে । আর এদেরকে ব্যবহার করছে এদেশের এক শ্রেনীর অসাধু মানুষ । কারও কাছে আবার রোহিঙ্গারা টাকা উপার্জনের একমাত্র উৎস ও মাধ্যম । জঙ্গীবাদের ভয়াল থাবায় ইতিমধ্যে আমরা আক্রান্ত হয়েছি ,রাখাইনের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সেখানে আর্ন্তজাতিক সন্ত্রাসবাদের উত্থানের সুযোগ করে দিয়েছে,যেটা আমাদের জন্যও উদ্বেগের । আমরা কি এই বিপুল পরিমান ঝুঁকি নিয়ে রোহিঙ্গাদের বোঝা বয়ে বেড়াতে পারবো ? আমরা মানবিক সাহায্য দিতে পারি,তাদের পক্ষে সোচ্চার হতে পারি ,প্রোপার ওয়েতে শরনার্থী হিসেবে সাময়িক আশ্রয় দিতে পারি কিন্তু রাখাইনের প্রতিবারের সমস্যায় দেশে চলে আসা লক্ষ্য লক্ষ্য রোহিঙ্গাকে স্থায়ীভাবে আশ্রয় দিতে পারি না ।
অনেকের প্রশ্ন বিশ্বনেতারা কেন বেশি সোচ্চার হচ্ছে না
?সেটাও অনুমিত । চীন মিয়ানমারের বরাবরের বন্ধু,আর ভারত হতে চাচ্ছে নব্য বন্ধু ।কারনটা সোজা -সামরিক শাসনের ঘেরাটোপ থেকে বেড়িয়ে মায়ানমার তাদের দেশে বিনিয়োগের রাস্তা উম্মুক্ত করে দিয়েছে । বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদের কারনে এটা এতটাই সম্ভাবনাময় যে,অনেকেই এটাকে ১৯৭৮ সালে চীনের বিনিয়োগ বাজার উম্মুক্ত করে দেয়ার সাথে তুলনা করেছেন । মাত্র ৪০ বছরে চীনের অর্থনৈতিক উত্থান আজ কোথায় সেটা সবাই আমরা জানি । কাজেই ঢাক গুরগুর করলেও কেউই চাইবে না মিয়ানমার এর সাথে সম্পর্ক  খারাপ করে বিনিয়োগের সুযোগ হাতছাড়া করতে ।আর ভারতের মিয়ানমার -থাইল্যান্ডকে নিয়ে মহা সড়কের পরিকল্পনায় মিয়ানমার অতি গুরত্বপুর্ন । আরও একটা সন্দেহ উড়িয়ে দেয়া যায় না - রাখাইন রাজ্য প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর তাই মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানীগুলো যদি অতীত ইতিহাসের সুযোগ নিয়ে রোহিঙ্গাদের জাতিগত ভাবে উৎখাত করতে চায় ,সেটাও হলে হতে পারে । কারন নিজেদের স্বার্থে মধ্য আফ্রিকার অনেক দেশের সরকার পর্যন্ত পরিবর্তন করানোর রেকর্ড এদের আছে । সবমিলে মিয়ানমারের সাথে স্বার্থের কারনেই বড় বড় রাষ্ট্রগুলো সেভাবে কিছু বলছে না । তুরস্ক ,মালয়েশিয়া কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে কিন্তু সেটা যথাযথ বা যথেষ্ট নয় । তবে মিয়ানমারের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে সবচেয়ে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপ ।
রোহিঙ্গা সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ভুগতেছি আমরাই- একদিকে মানবিকতা আর একদিকে দেশের স্বার্থ । তবে এখন পর্যন্ত মানবিক দিক বিবেচনায় আমাদের  সরকার যা করেছে সেটা যথার্থ । আশ্রয়প্রার্থীরা চিকিৎসা সহায়তা ও ত্রান পাচ্ছে,সাময়িক আবাসন এর ব্যবস্থাও করা হচ্ছে । তবে দীর্ঘমেয়াদে আর্ন্তজাতিক সাহায্য প্রদানকারী সংস্থাগুলোর সাহায্য নেয়া উচিত ।
ব্যক্তি পর্যায়ে এবং সাংগঠনিকভাবে কিছু মানুষও বেসরকারিভাবে  সাহায্য করছে । মানুষ হয়ে মানুষের বিপদে দ্বাড়ানোই এখন উচিত ।তাই আপাতত তাদের খাওয়া এবং থাকার ব্যবস্থা করাই আমাদের দায়িত্ব, সাথে শরনার্থীদের যথাযথ তালিকা করা উচিত দ্রুত । সরকারের মুল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত যদ দ্রুত সম্ভব তাদেরকে নিজ ভুমিতে  ফেরত পাঠানো । আর্ন্তজাতিক লবীতে আওয়াজ তুলতে হবে তাদের নাগরিকত্ব প্রদানের । আশার কথা আগামীকাল থেকেই হয়তো শরনার্থীদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন শুরু হবে । মিয়ানমার সরকার বলেছে নাগরিকত্ব প্রমান করতে পারলে তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিবে ,সমস্যা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের কোন নাগরিকত্ব নেই । তবে সঠিক কুটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যেতে পারলে ফেরত পাঠানো সম্ভব ।প্রমান এর আগেও জাতিসংঘের সহায়তায় ১৯৭৮ সালে প্রায় আড়াইলক্ষ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল ।
মানবিক কারনে যেমন আজ রোহিঙ্গাদের পাশে আমরা দ্বাঁড়িয়েছি তেমনিভাবে চাইবো সমস্যার সঠিক সমাধানের মাধ্যমে এসব শরনার্থীকে মিয়ানমারে পাঠানো হবে ।
আশাকরি রাস্ট্রীয় এই সমস্যায় সকল নাগরিক ও রাজনৈতিক দলগুলোর এক হতে থাকতে পারবে ।
স্বজন হারানো ,ঘর হারা মানুষগুলো ফিরে যেতে পারবে নিজ ভুমিতে ।

Monday, July 17, 2017

একজন রাশেদের কথা

খুব সহজ সরল এক ছেলে রাশেদ । রাশেদদের ছোট সংসার ! বাবা মা আর ভাই বোন নিয়ে সুখের সংসার। সংসারে অভাব আছে, আছে নানা কষ্ট , ও না পাওয়ার গল্প । তারপরও তাদের সংসারটা অনেক সুখের । নানা ঝামেলার মাঝেও এই সুখটুকু রাশেদকে মানসিক প্রশান্তি দ্যায় । সে আসলে কিছুটা অদ্ভুদ প্রকৃতির মানুষ !! তার চারপাশে তারচাইতেও আরও অনেক অদ্ভুদ প্রকৃতির মানুষ আছে তবে রাশেদের বিষয়টা একটু আলাদা ! সে সব সময় সাধারনই থাকে ,তার যতসব অদ্ভুতুরে বিষয়গুলো দেখা দ্যায় যখন সে একা থাকে । কোন একদিন কোন একজন মানুষ তার এইসব অদ্ভুদ বিষয় নিয়ে বলেছিল- “তুমি যে আসলে কি না ?” সত্যি তাই , সে তো আসলেএকটা “কি” ই ! এই “কি” জিনিসটা কেউ বুঝে না , রাশেদও প্রথম দিকে বুঝত না কিন্তু এখন সে বোঝে । এই যে তার অদ্ভদ অদ্ভুদ অনুভুতি, কেমন-কেমন লাগা সে নিজেই এইটার নাম দিয়েছে “কি” ।
দুনিয়ার সব কিছুতেই রাশেদের অনেক আগ্রহ । রাস্তা দিয়ে একটা গাড়ি গেলে সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, গাছের পাতা বাতাসে নড়ে উঠলে সে সেই শব্টা শোনার চেষ্টা করে, শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে মানুষের রাস্তা দিয়ে হাঁটাচলা দেখে । এ সব কিছুই তার কাছে অনেক সুন্দর মনে হয় । এমন কি একবুক নিকোটিন টানার পর যখন ধোয়াগুলো কুন্ডলী পাকিয়ে সামনে উড়তে থাকে, সেখানেও সে সৌন্দর্য্য খুজেঁ পায় :D
তার সবচাইতে ভাল লাগে মানুষকে হাসতে দেখলে ।
কেউ হাসলে রাশেদের এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে । এজন্য অবশ্য তাকে কম বিড়ম্বনা পোহাতে হয় নাই তবে সে অন্য কথা !! এখন রাশেদ তাই অনেক সতর্ক !! কাউকে হাসতে দেখলেই সে আর হা করে তাকায় না ! লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে ;-)
ইদানিং সে অন্য একটা উপায় বের করেছে । রাশেদ খেয়াল করে দেখেছে কি অল্পতেই না মানুষ খুশি হয় । এখন সে আশেপাশের মানুষগুলোকে নানা ভাবে খুশি করার চেষ্টা করে ।
একটা ভাল কথা বা সামান্য হাসিও যে মানুষকে কতটা খুশি করতে পারে,সেটা না দেখলে বুঝিয়ে বলা সম্ভব নয় । মানুষ খুশি হয় আর রাশেদ সেটা প্রান ভরে দেখে ।
প্রতিনিয়ত রাশেদের চারপাশের মানুষগুলো বদলে যাচ্ছে, কত দ্রুতই না বদলে যাচ্ছে কিন্তু রাশেদ বদলাতে চায় না । সে আসলে “কি” ই থাকতে চায়।
রাত প্রায় দুটো  ! রাশেদ এখন শুয়ে আছে পিচঢালা পাকা রাস্তায় ! আকাশে মেঘ থাকলেও হঠাৎ হটাৎ দুই একটা তারা মেঘ ফুরে উকিঁ দিচ্ছে।
রাশেদের কিছু ভাল লাগছে না আবার খারাপও লাগছে না । হা করে, শূন্য দৃষ্টিতে সে চেয়ে আছে আকাশের দিকে…………………..

Tuesday, May 16, 2017

ন্যাড়া কাহিনী

গতকাল সকালে উঠেই মনে হইলো মাথা ন্যাড়া করে ফেলবো, যেই ভাবা সেই কাজ ! সেলুনের ছেলেটাকে ডেকে এনে মাথা ন্যাড়া করে ফেললাম। শুধু ন্যাড়া করেই ক্ষ্যান্ত হই নাই সেটা ফেসবুকেও আপলোড করে দিছি। এই নিয়ে কেউ খুশি আবার অনেকেই নাখোস। একজন তো আমাকে বলে বসেছেন-শিক্ষক মানুষ মাথা ন্যাড়া করা কি ঠিক ? ছাত্র ছাত্রী দেখলে কি মনে করবে ?
মাথা ন্যাড়া্ করাটা দোষের কি বুঝলাম না ! পরে ভেবে দেখলাম দোষ আসলে আমারও না, সেই ব্যক্তিরও না। ছোট বেলা থেকেই আমরা জেনে এসেছি- চুল ঘন ও কালো করা্র চেষ্টা ছাড়া,কোন দোষ করলে শাস্তি স্বরুপ ধরে মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয় । এমন কি মাথা ন্যাড়া করলে শুনতে হত নানা টিপ্পনী। সহপাঠীরা বলতো –
‘ঠুল্লা মাথা বেল বেল পইড়া গেল মাথার তেল।’
কারনটাও অবশ্য অনুমেয় কারন ছোট বেলায় মা, দাদীরা ন্যাড়া মাথায় জবজব করে তেল দিয়ে দিতেন ।
কিন্তু মাথা ন্যাড়া কি শুধূ কেশ ঘন কালো আর দোষ করলে শাস্তি স্বরুপ করা হয় ?
জন্মের পরপরই ৭ দিনের মধ্যে মাথা কামানো দিয়ে শুরু হয় ন্যাড়া করার পালা, জন্মানোর পরপরই নিশ্চই কেউ দোষ করে না তাই নিশ্চিত অন্য কোন এক অজানা কারনে মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয় ।
হিন্দু ধর্মে মা বাবা মারা গেলে শ্রাদ্ধের সময় মাথা ন্যাড়া করার রেওয়াজ রয়েছে। আবার এই ধর্মের সদ্য বিধবারাও স্বামীর মৃত্যু শোকে মাথা ন্যাড়া করে থাকেন। অর্থাৎ ন্যাড়া মাথা শোকের আমেজ বহন করে এবং সেটা ধর্মীয় মতে । আবার তীর্থযাত্রীরা মহিলা পুরুষরাও গয়া কাশি বৃন্দাবন ঘুরে আসলে মাথা ন্যাড়া করেন,এটা হয়তো পবিত্রতার স্বরুপ করে থাকেন ।
ইসলাম ধর্মেও পুরুষরা হজ্বের সময় মাথা ন্যাড়া করেন । মানে এখানেও মাথা ন্যাড়া করার সাথে ধর্মীয় সম্পর্ক বিদ্যমান ।
বৌদ্ধ ধর্মের মন্ক বা সন্যাসীদের কথা ভাবলেই প্রথমেই আসে ন্যাড়া মাথা -এখানেও ধর্মের সাথে ন্যাড়া মাথা জড়িয়ে গেছে । অর্থাৎ মাথা ন্যাড়া শুধু দোষের কারনে নয় ধর্মও বিভিন্ন কারনে মাথা ন্যাড়াকে সমর্থন দিয়েছে ।
আবার যুগে যুগে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবেও মাথা ন্যাড়া করা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে । ফিলিপায়েন্সের মানিলা তে চব্বিশ জন শ্রমিক, তাদেরকে ছাঁটাই করার প্রতিবাদে মাথা ন্যাড়া করে প্রতিবাদ শুরু করে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে চীনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের লিঙ্গ বৈষম্যের নীতির বিরুদ্ধে ৪ জন মেয়ে মাথা ন্যাড়া করে প্রতিবাদ করে। এভাবেই যুগে যুগে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে কাজ করেছে ন্যাড়া মাথা ।
এতো গেলো ন্যাড়া মাথার ধর্মীয় আর সামাজিক দিক,চলেন দেখি বৈজ্ঞানিক ভাবে কি ব্যাখা দেয়া হয়েছে - সোশ্যাল সাইকোলজি অ্যান্ড পারসোনালিটি সায়েন্স জার্নালে আমেরিকার পেনসিলভিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হোয়ারটন স্কুলের অধ্যাপক আলবার্ট ম্যানিস দীর্ঘ গবেষনা করে জানিয়েছেন- চুল কামিয়ে চকচকে ন্যাড়া মাথার মানুষরা সচারচর ক্ষুরধার ও কঠিন স্বভাবের। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে তাদের প্রভাবশালী ও বেশি পৌরুষ বিরাজ করে।
এতো গেলো ন্যড়া মাথার স্বপক্ষে যুক্তি । এবার চলুন চিনে আসি ন্যাড়া মাথার বিখ্যাত কিছু ব্যক্তিকে ।
মহাত্মা গান্ধীকে কে না চিনেন, দেশ সেবার আজীবন ব্রত নিয়ে অহিংসবাদী এই মহান নেতা আজীবন ছিলেন ন্যাড়া মাথায় । তিব্বতীয়ান নেতা ও ধর্মীয় গুরু দালাই লামাও ন্যাড়া মাথার মানুষ ।
খেলার জগতেও ন্যাড়া মাথার জয় জয়কার । ন্যাড়া ফুটবলারের সংখ্যা গুনে শেষ করা যাবে না তার মধ্যে প্রথমেই মনে পড়বে “দ্য ফেনোমেনন” নামে খ্যাত রোনাল্ডোর কথা । ন্যাড়া মাথাকে ব্রান্ডিং করার জন্য রোনাল্ডোর নামটা উপরের দিকেই থাকবে । এরপর যদি কারও চকচকে মাথার কথা মমে পড়ে তো সেটা জিনেদিনে জিদান , অবশ্য এক সময়ের ফ্রান্সের গোলকিপার ফাবিয়ান বার্থেজও ন্যাড়া মাথার জন্য পরিচিতি লাভ করেছিলেন ।
বাস্কেট বলে ন্যাড়া মাথার অভাব নেই তবে বিখ্যাত নামটা অবশ্যই মাইকেল জর্ডান ,টেনিসে যেমন আছেন আন্দ্রে আগাসী । এদিকে অ্যাথলেটিকসে ব্রিটেনের মো ফারাহ তো চার বারের অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন।
বক্সিং এর বিখ্যাত দুটি নাম মাইক টাইসন এবং ফ্লয়েড মেডওয়েদার- কাকতালীয়ভাবে দুজনেই ন্যাড়া মাথার । ডোয়াইন জনসন কে চিনেন তো ? অবশ্য এই নামে না চেনারই কথা কারন উনি “দ্যা রক” নামেই আমাদের সবার কাছে পরিচিত- নিশ্চই তার ন্যাড়া মাথার কথা মনে করিয়ে দিতে হবে না । রেসলিং জগতের আরও একজন ট্রেড মার্ক ন্যাড়া মাথার মালিক হচ্ছেন স্টিভ অষ্টিন ।
সিনেমা জগতেও ন্যাড়া মাথার মানুষের অভাব নেই –আমার প্রিয় অ্যাকশন হিরো জেসন স্ট্যাথাম, ট্রিপল এক্স বা ফার্স্ট এন্ড ফিউরিয়াস খ্যাত ভিন ডিজেল, ব্রুস উইলিস, শক্তিশালী ব্রিটিশ অভিনেতা পেট্রিক স্ট্রুয়ার্ট প্রত্যেকেই ন্যাড়া মাথার ।
বিশ্বকাপ ফুটবল দেখলে পিট বুলকেও চেনার কথা – ওই যে, ন্যাড়া মাথার যে মানুষটা ব্রাজিল বিশ্বকাপে সুন্দরি জেনিফার লোপেজের পাশে দাড়িঁয়ে “ওলে ওলা” গেয়েছিল ।
অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা ন্যাড়া মাথার জেফ বেজোস যে, একজন সফল ব্যবসায়ী সেটা ও বলার অপেক্ষা রাখ না ।
মাথা ন্যাড়া করার ক্ষেত্রে নারীরা ও পিছিয়ে নেই –সিনেমা প্রেমী হন আর না হন মিডিয়ায় সামান্য আগ্রহ থাকলেও পাশের দেশের ঋতুপর্ন ঘোষের নাম শোনারই কথা, গুনী এই অভিনেত্রী এবং পরিচালক সব সময়ই ন্যাড়া মাথায় থাকেন । ন্যাড়া করেছিলেন ম্যাড ম্যাক্সের হেরোইন চার্লিস থেরন আবার ধরেন আমেরিকান আইডল কেলি পিকল- যিনি স্তন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়তে থাকা তার বাল্য বান্ধবীকে সমর্থন জানাতে মাথা ন্যাড়া করেছিলেন ।
ন্যাড়ার সাতকাহনের পর ন্যাড়া মাথার সমর্থনে আশা করি আর কিছু বলতে হবে না । এবং ভবিষ্যতে কারও মন চাইলেই বা প্রয়োজনে মাথা ন্যাড়া করতেও দ্বিধা করবেন না ।
কথিত আছে, ন্যাড়া বেলতলায় একবারই যায় – এটাও ভুল ! কারন মাথায় বেল না পড়া পরযন্ত ন্যাড়া বেল তলায় একবার না, যাবেন বারবার :)

Saturday, May 13, 2017

যুদ্ধাপরাধী নিয়ে ক্যাচাল

এই লেখাটা লিখেছিলাম ২০১৬ সালের ১৪ মে ।  আমার বাড়ির পাশের আমারই এক প্রাক্তন ছাত্র আমাকে যুদ্ধাপরাধীর শাস্তির ব্যাপারে একটা ফেসবুক পোষ্টে ট্যাগ দিয়েছিল। বিষয়টা ছিল ফিলিস্থিন উলামা পরিষদ এবং হিন্দুস্থান জামাত কর্তৃক নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করায় নিন্দা জানানো । এই বিষয়ে আর কথা বলতে চাচ্ছিলাম না কিন্তু ও যেহুতু আমাকে পোষ্টে ট্যাগ দিয়েছিল তারই প্রেক্ষিতে কিছু বলা । আমি আগেও বহুবার একটা কথাই বলেছি “ইসলাম আর জামাতে ইসলাম এক কথা নয় “ জামাত একটি আর্ন্তজাতিক সংগঠন। সারা বিশ্বে এর শাখা ছড়িয়ে আছে তাই জ্ঞাতি ভাইয়ের জন্য আর একজন জ্ঞাতি ভাই চিল্লাবে সেটাই তো স্বাভাবিক ।সেটা ভারতীয় ও হতে পারে পাকিস্তানীও হতে পারে । পাকিস্থান জামাত -হিন্দুস্থান জামাত ,মুসলিম ব্রাদারহুড আর বাংলাদেশের জামাতে ইসলাম সবাই একসূত্রে গাঁথা । এই আর্ন্তজাতিক সংগঠনটি যখন দেশপ্রেম আর দেশ নিয়ে কথা বলে তখন সত্যি আমার হাসি পায় ! আমাকে বুঝানোর কিছু নাই ,আমি মুসলিম পরিবারের সন্তান ,পারিবারিকভাবেই নৈতিক আর ধর্মীয় শিক্ষা পাইছি বাকিটুকু ইসলামী বইপত্র পড়ে শেখার চেষ্টা করছি ।আমি হুজুরদের কথা অন্ধভাবে বিশ্বাস করি না । কারন যে কোন বিষয়ে তারা  জানুক আর না জানুক নিজের মত করে হলেও  একটা ব্যাখা দিয়ে দ্যায় :) আজ পর্যন্ত ছোট/বড় যে কোন হুজুরকে প্রশ্ন করে তার উত্তর দিতে পারেন নাই বা বলেছেন যে বিষয়টা আমার জানা নেই এমনটা  আমি হতে দেখিনি । মাথায় টুপি আর দাড়ি রাখলেই হুজুর রা নিজেদের ধর্মের সকল কিছুর অধিকারি ভাবতে শুরু করেন আর ধর্মীয় নেতাদের বিশ্বাস  করার প্রশ্নেই আসে না কারন এরা জাত ব্যবসায়ী, মানুষকে ধর্মের ভয় দেখিয়ে আর ধর্মকে পূজী করে ব্যবসা করেই এরা নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করেন ( উপরের দুটি মন্তব্যই অবশ্য পাইকারি হারে সবার জন্য প্রযোজ্য নয়, দুই একজন ব্যতিক্রম আছেন তবে তারা ধর্ম নিয়ে কখনই এত লাফালাফি করেন না- এমন দুই একজনকে বলতে শুনেছি -ধর্ম সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ তালা আর সেটা রক্ষাও করবেন উনি, আমার কাজ সেটা পালন করা আর মানুষকে ধর্মের পথে দাওয়াত দেওয়া )। আমার ইসলাম আমাকে শিক্ষা দিয়েছে সহনশীলতা,মানবিকতার, ন্যায়ের । এই শিক্ষা নিয়ে একজন লেবাসধারী হুজুর যে কিনা যুদ্ধাপরাধী,হত্যাকারী তার পক্ষে কথা বলার শিক্ষা আমার ইসলাম আমাকে দ্যায় নাই । যাউগ্যা অত প্যাচাল না পারি- তুরস্ক নাকি তার রাস্ট্রদূতরে ডাইকা নিছে ,নিজামীর ফাসিঁর ব্যাপারে বিস্তারিত জানার জন্য । অনেকেই মনে করায় দিচ্ছেন যে তুর্কীরা আর্মেনিয়ানদের সাথে কি করেছিল । আমার অবশ্য অত কিছু মনে হচ্ছে না ,কারন  একদল যুদ্ধাপরাধী আর একদলকে সাপোর্ট দিবে এটাই তো স্বাভাবিক নাকি ? নিজামীরে ঝোলানোর পর পাকিদের নাকি কান্নাটা হচ্ছে দেখার মত !! ওরা মানবধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলছে !!হায়রে, যে দেশে প্রতিনিয়ত মানবধিকার ধুলায় লুন্ঠিত হয়-যেখানে একই ধর্মের হওয়া সত্বেও শুধুমাত্র শিয়া সূন্নী মতভেদের কারনে ‍পুলিশ ষ্টেশন থেকে বের করে জবাই করা হয়, যেখানে নারীদের কোন অধিকার নেই ,যেখানে মসজিদে নামাযের সময় বোমা বিষ্ফোরন হয় । খুন হত্যা যখম থেকে যে দেশে খেলোয়াররাও ছাড় পায় না , প্রতি সেকেন্ডে যেখানে মানবধিকার লূন্ঠিত হয় তারাই বলছে মানবধিকার এর কথা !! এর চাইতে হাস্যকর কিছু করার ক্ষমতা বোধহয় আর তাদের নেই ।পাকিরা চেচাঁমেচি করুক, ধর্ম ব্যবসায়ীরা হাসঁফাস করুক কিন্তু আমরা একটু তৃপ্তি পেতেই পারি । যারা এই দেশটার জন্ম চায় নি, যারা আমার দেশের মান আর সম্মানকে হত্যা করেছে। হত্যা করেছে আমার দেশের ভাই,মামা,চাচাদের । ধর্ষন করেছে আমাদের মা বোনদের ,যাদের অন্যায় আর অত্যাচার থেকে বাদ যায়নি শিশুরাও । তাদের  বিচারে এতটুকু তৃপ্তি আমরা পেতেই পারি ।
#রাজাকার_নিপাত_যাক

Thursday, May 11, 2017

মধু’র বিড়ম্বনা

বিকেলে বসে আডাডা দিচ্ছি- হঠাৎ একটা ফোন আসল,
-আপনি কি নাসিরুল আলম মন্ডল বলেছেন ? আমি সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস,লালমনিরহাট থেকে বলছি ,ঢাকা থেকে আপনার একটা পার্সেল  এসেছে ।
আমি তখন রংপুরে একটা ট্রেনিং এ তাই বললাম…
- আমি কি পার্সেল টা রংপুর থেকে পিক করতে পারি।    উনি বললেন
- পারবেন। তবে রবিবার নিতে হবে ।
আমি কথা মত রবিবার তাদের রংপুর অফিসে গেলাম,
ভাই লালমনিরহাট থেকে আমার একটা পার্সেল এসেছে বলার পরও উনি আমার দিকে তাকালেনই না,১০ মিনিট দাড়িয়ে থেকে আবার প্রশ্ন করায় বলল।
- আপনাকে কি ফোন করা হয়েছে ,আমি বললাম না,
- তাহলে আপনি  এসেছেন কেন ?
  আর কথা না বাড়িয়ে চলে এলাম। ৪ দিন অপেক্ষা করেও ফোন না আসায় সিলেট যাওয়ার পথে আবার তাদের অফিসে গেলাম, কিন্তু এদিনও কিছুক্ষন উপেক্ষা এরপর তাদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেয়ার পর তারা বললেন
-এখানে আপনি এটা পাবেন না,আপনি শাপলায় পার্সেল অফিসে যোগাযোগ করেন।
   ঢাকার বাস ধরার তারা ছিল তাই আর সেদিন পার্সেল অফিসে  গেলাম না । ৪দিন পর সিলেট থেকে ফিরে এসে তাদের পার্সেল অফিসে যোগাযোগ করলাম।কিন্তু সেখানেও একই অবস্থা !  আমার কথা শোনারও যেন তাদের সময় নেই। অপেক্ষার অবসান শেষে ঘটনা বুঝিয়ে বলার পর তাদের কথা...
- আপনি এখানে এসেছেন কেন ,লালমনিরহাটে যোগাযোগ করেন।
লালমনিরহাট অফিসের নম্বর চাইলাম, কিন্তু তিনি আমার প্রশ্নের উত্তর দেয়ারও প্রয়োজন মনে করলেন  না ।আমাকে যেখান থেকে ফোন দেয়া হয়েছিল সেখানে ফোন দিলাম,এই নামের পার্সেল আমাদের কাছে নেই বলেই তারা ফোন কেটে দিল।( যেন আমি কথা বললে তাদের টাকা কাটত) অবশেষে অন্য মারফত লালমনিরহাট পার্সেল অফিসের নম্বর সংগ্রহ করে ফোন করলাম,এই ভদ্রলোক প্রথমে সেভাবে কথা বলতে না চাইলে , একটু রাগারাগিই করলাম । বললাম ,আপনার কাছে তো আমি টাকা চাচ্ছি না,তথ্য চাচ্ছি আর আপনারা ক্লায়েন্ট এর সাথে এত খারাপ ব্যবহার করেন কেন ? এতে উনি একটু নরম হলেন এবং আমাকে বুঝিয়ে শান্ত করলেন।
অতঃপর ৮ তারিখ বিকেলে ৩০ কিঃমি যার্নি করে  লালমনিরহাট গেলাম সেই অফিসে ,যেখান থেকে আমাকে প্রথম ফোন করা হয়েছিল ।সেখানে যিনি দায়িত্বে আছেন ১৫ মিনিট দ্বাড় করিয়ে রেখে খাতা খোজাঁ শুরু করলেন এবং কিছুক্ষন পর বললেন
- আপনি  নাসিরুল আলম মন্ডল ।
আমি বললাম - জ্বি হ্যাঁ !
-আপনি এখানে এসেছেন কেন,রংপুরে যোগাযোগ করেন“     কত তারিখে রংপুর পাঠিয়েছেন খাতা দেখে তাও বললেন।  ওনাকে বললাম রংপুরে ৩ দিন খোজঁ নিয়েছি।
তার এক কথার উত্তর - আবার যান ।
এই কথোপকথনের সময় উনি আমার দিকে তাকানোরও প্রয়োজন বোধ করেন নাই । এরপর রাগ করে ওনাকে বললাম রংপুর কোথায় পাঠিয়েছেন ফোন দেন । উনি ফোন না দিয়ে আমাকে নম্বর দিয়ে ফোন করতে বললেন। কি আর করা আমি ফোন দিলাম কিন্তু আমাকে প্রায় ৬ মিনিট লাইনে রেখেও রংপুর থেকে  বলতে পারল না যে,পার্সেলটা তাদের কাছে গেছে কিনা ? এরপর লালমনিরহাটের সেই ব্যক্তিকে নানা প্রশ্ন করলেও তিনি কোন উত্তর না দিয়ে একবার শুধু বললেন “আমার রংপুর পাঠাতে একটু দেরি হয়েছে “। বাধ্য হয়ে ঢাকা থেকে যিনি পাঠিয়েছেন #Hasan ভাই তাকে ফোন দিয়ে জানালাম । এর পরদিন আবার ৩৫ কিঃমিঃ এর হ্যাপা পেড়িয়ে  রংপুর অফিসে গেলাম কিন্তু সেখানেও আমার পার্সেলের কোন খোজঁ না পেয়ে সব আশা ছেড়ে দিয়ে বসে ছিলাম । কিন্তু আজ দুপুরে লালমনিরহাট থেকে আবার ফোন এল ,
- ভাই আপনি কি নাসিরুল আলম মন্ডল বলছেন , জ্বি হ্যাঁ ,
- আপনার পার্সেল টা আসলে রংপুর পাঠানো হয় নাই,নিচেই পড়ে ছিল আমরা আসলে দেখতে পাই নাই :O :O
এরপরই হাসান ভাইয়ের ফোন আসায় বুঝলাম ,ঘটনাটা ঘটল শুধুমাত্র হাসান ভাই তাদের ঢাকার অফিসে যোগাযোগ করেছেন  বলেই ।
জানিনা আবার নতুন কিছু ঘটবে কিনা তবে আশা করছি ২/৩ দিনের মধ্যে পার্সেলটা উঠিয়ে নিতে পারব কিন্তু মাঝখান থেকে  আমার প্রায় ৬/৭ শত টাকা খরচ হল :( নষ্ট হল অনেক গুলো কর্ম ঘন্টা,  :( উপরি পাওনা হিসেবে পেলাম কুরিয়ার সার্ভিস এর কর্মীদের যাচ্ছে তাই ব্যবহার :( :(

সরকারি ডাক বিভাগ নিয়ে নানা ধরনের রম্য গল্প প্রচলিত আছে আর এই যদি হয় একটা বেসরকারি  পার্সেল অফিসের সেবার অবস্থা , আমরা তাহলে যাব কোথায় ? এই পার্সেলটা হতে পারত জরুরী কোন ঔষধের , হতে পারত অন্য কিছু জরুরী বস্তু ! কিন্তু তাদের আচরন দেখে মনে হয়  আমাদের গ্রাহকদের সুবিধা অসুবিধায় তাদের কিছু যায়  আসে না :(
জানি ফেবুতে লিখে কোন লাভ নেই !! তারপরও শুধু শেয়ার করা জন্যই লিখলাম । আফসোস কবে যে আমরা সেবাগ্রহীতারা সকলে মিলে এইসবের বিরুদ্ধে জোড়ালো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারব ?

Monday, March 13, 2017

বিশ্বকাপ - ২০১৫ নিয়ে কিছু কথা

এই লেখাটা ২০১৫ বিশ্বকাপ শুরুর আগে ফেসবুকে নোট হিসেবে পাবলিশড করেছিলাম । এবার নিজস্ব ব্লগে দিয়ে রাখলাম !!
ক্রিকেট খেলাটা আমার খুব ভাললাগা বিষয়গুলোর মধ্যে একটা । আমি শুধু একজন ক্রিকেটপ্রেমী না, যখন ক্রিকেট খেলা দেখি তখন নিজের চিন্তা ভাবনা থেকেই ম্যাচটা বিশ্লেষন করার চেষ্টা করি । সব সময়ই ম্যাচ পরিস্থিতি অনুযায়ী গেমপ্লান তৈরি করাটাও আমার একটা অভ্যাস । কোন ব্যাটসম্যান কোন শটটা ভাল খেলছে, কোন ধরনের বল খেলতে পারছে না বা বোলার কোন বলটা করলে সুবিধা পাচ্ছে এসব ভাবার চেষ্টা করি আর কি । এখন আর সেভাবে খেলা দেখার সময় হয়ে উঠে না তবুও নিজের সেই ক্ষুদ্র বিশ্লেষনী শক্তি,কন্ডিশন আর দলগুলোর শক্তিমত্তা ও খেলোয়ারদের সাম্প্রতিক ফর্ম খেয়াল রেখে আমি চেষ্টা করেছি বিশ্বকাপের সেরা ৫ টি দলকে নিয়ে কিছু লেখার । আর এই ৫ দলের সাথে থাকছে আমার নিজের দেশের সম্ভাবনা ও সুযোগ নিয়ে কিছু কথা ।
ক্রিকেটকে বলা হয় মহা অনিশ্চয়তার খেলা তাই ক্রিকেট নিয়ে প্রেডিকশন করাটা একটু বোকামী । তারপরও আমার কাছে ৪ সেমিফিইনালিষ্ট এর মধ্যে ৩ টা দল হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড আর সাউথ আফ্রিকা । অপর জায়গাটায় আসতে পারে ভারত,পাকিস্তান বা শ্রীলংকার মধ্যে উপমহাদেশের যে কোন একটা দল। এটা কিছুটা খেলার কথা চিন্তা বলা আর কিছুটা আইসিসির উপর সন্দেহ করে বলা । কারন দিনশেষে ওরা ব্যবসায়ী, ব্যবসার স্বার্থের জন্য ওরা কোন দলকে বিশেষ সুবিধা দিতেও পারে । প্রথমেই বলে রাখি এই টূর্ণামেন্টে আমার বাজির ঘোড়া নিউজিল্যান্ড । যদিও জানি বিশ্বকাপটা জিততে হলে অস্ট্রেলিয়াকে কাটিয়েই তাদের জিততে হবে।
অষ্ট্রেলিয়াঃ গত একযুগে অস্ট্রেলিয়া যা করেছে তাতে করে বিশ্বের যে কোন প্রান্তে যে কোন কন্ডিশনে খেলা হোক না কেন তাদেরকে আপনার হিসেবের মধ্যে রাখতেই হবে। তাছাড়া খেলাটাও হবে নিজেদের কন্ডিশনে। আর দলটাও কি অসাধারন । এই দলে ওয়ার্নার, ম্যাক্সওয়েল আর স্মিথদের মত বিদ্ধংসী ব্যাটসম্যানরা যেমন আছে তেমনি আছে সুন্দর একটা পেস এট্যাক যার নেতৃত্ব জনসনের মত খুনে বোলারের হাতে । ফকনরারের মত ব্যাটসম্যান এই দলের ৮ নম্বর ব্যাটসম্যান । অভাব যদি কিছু থেকে তবে সেটা মাইকেল বেভান বা হাসির মত ফিনিশারের । যদিও তাদের দলে উরাধুরা ফিনিশারের অভাব নেই ।কিন্তু এমন ব্যাটসম্যানরা তো আর প্রতিদিন জন্মায় না তবে ফিট মাইকেল ক্লার্ক এই অভাবটা অনায়াসেই পূরন করতে পারবে । অন্য যারাই বিশ্বকাপ জিতুক অস্ট্রেলিয়াকে চেজ করেই তাদেরকে সেটা করতে হবে।
নিউজিল্যান্ডঃ আগেই বলেছি এই বিশ্বকাপে আমার বাজির ঘোড়া নিউজিল্যান্ড ! আমাকে যদি এক ম্যাচ খেলেই কাপ দিয়ে দেওয়ার সুযোগ দেয়া হত তবে আমি ফাইনাল খেলাতাম অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ড কে । নিউজিল্যান্ড বরাবরই আমার কাছে মিনি অলরাউন্ডারের দল ছিল । যেসব খেলোয়ার একটু বোলিং পারে আবার একটু ব্যাটিংও পারে । অনেকেই তাদেরকে সেমি ফাইনালের টিম বলে তাতে অবশ্য এটাই প্রমান হয় যে , এই মিনি অলরাউন্ডাররা বিশ্বকাপের মত লম্বা আসরে কতটা কার্যকর। তবে তাদের এবারের টিমটা ব্যাতিক্রম । এই দলে গাপটিল,ম্যাককালাম, টেলর আর উইলিয়ামসন এর মত স্পেশালিষ্ট ব্যাটসম্যান যেমন আছে তেমনি আছে ঘন্টায় ১০০ মাইল বেগে বল করার মত স্পেশালিষ্ট বোলারও । সাথে কোরি এন্ডারসন এর মত বিদ্ধংসী অলরাউন্ডার আর “বুড়ো”ভেট্টোরির কথাও ভুলে যাবেন না । তবে জিমি নিশামকে মিস করব । তার বৈচিত্রপূর্ন স্লোয়ার আর লোয়ার অর্ডারে হার্ড হিটিং ব্যাটিংটা অনেক কার্যকারি কিন্তু তাকে বাদ দেয়াটাই আবার প্রমান করে তাদের দলটা কতটা ব্যালান্সড। আগেই বলেছিলাম যারাই জিতুক অস্ট্রেলিয়াকে কাটিয়ে আসতে হবে । সেক্ষেত্রেও নিউজিল্যান্ড এগিয়ে । তাসমান প্রতিপক্ষ হিসেবে বরাবরই তারা অস্ট্রেলিয়াকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এসেছে । ভুলে যাবেন না কন্ডিশনটা কিন্তু তাদেরও ।

সাউথ আফ্রিকাঃ সাউথ আফ্রিকার নাম আসলেই চোকার্স কথটা আসবেই । তবে আমি এইসবে বিশ্বাস করি না । হ্যাঁ,চাপ টাপ বলে কিছু একটা হয়ত সৃষ্টি হয় কিন্তু সেটাতো সবারই হয় এবং বিশ্বকাপের মত আসরে সব সময়ই থাকবে। তারা হয়ত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ওভারকাম করতে পারে নাই এই যা !! গত কিছুদিনে তারা যা করছে সেটা যদি অব্যাহত রাখতে পারে তো ফাইনালে তারাও আসতে পারে অনায়াসেই । আমলা , ভিলিয়ার্স, ডু প্লেসিস আর ষ্টেইন শুধুমাত্র এই চারজনেই দক্ষিন আফ্রিকাকে নিয়ে যেতে পারেন ফাইনালে । তবে ফাইনাল যেই খেলুক চোখ রাখুন ডি ভিলিয়ার্স এর উপর । আমি নিশ্চিত ব্যাটসম্যান হিসেবে ডি ভিলিয়ার্স এই বিশ্বকাপটাকে নিজের করে নিতে যাচ্ছেন ।

পাকিস্থানঃ পাকিস্থান সব সময়ই আন প্রেপিক্টেবল টিম । তাই তাদেরকে নিয়ে খুব বেশি কিছু বলা সম্ভব নয় । তবে নিজেদের সামর্থ্য দিয়ে খেলেতে পারলে বিশেষ করে পাকিস্থানের ব্যাটিং যদি ক্লিক করে তবে উপমহাদেশের দলগুলোর মধ্যে সেমিফাইনালে খেলার সবচেয়ে ভাল সম্ভাবনা আছে পাকিস্থানের। বোলিং কোনদিনই পাকিস্থানের কোন সমস্যা ছিল না এখনও নয় । আজমল আর হাফিজ না থাকাতে অবশ্য তারা অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে । এক আজমল থাকলেই আমি তাদের সম্ভবনাটা ১০% বাড়িয়ে দিতাম । আর হাফিজ না থাকাতে আকমলকে সাথে নিয়ে দলের তিন সিনিয়র ব্যাটসম্যান ইউনিস খান, মিজবাহ আর আফ্রিদিকেই কিছু করতে হবে। শেষ পর্যন্ত পাকিস্থানের থাকা না থাকার অনেকখানি নির্ভর করছে এই তিনজনের উপরই ।
ভারতঃ ভারতের বর্তমান অবস্থা তেমন ভাল না । কিন্তু গতবারের চ্যাম্পিয়ন আর খেলাটা ক্রিকেট বলেই তাদেরকে বাদ দেয়া যাচ্ছে না । ভুলে যাবেন না এই খেলাটাকে আইসিসি না ভারত নিয়ন্ত্রন করে । আর দিনশেষে ক্রিকেট তাদের কাছে ব্যবসা ছাড়া কিছু নয় । টূর্ণামেন্ট থেকে ভারতের বিদায় এর আয় কমিয়ে দিবে অনেকখানিই । ভারতের সবচেয়ে দূর্বলতা তাদের বোলিং কিন্তু যতটা বলা হচ্ছে ততটা বোধহয় নয়, তবে সম্ভাব্য অন্য দলগুলোর তুলনায় দুর্বল তো বটেই । অতীতে গ্রেট সব ব্যাটসম্যানরা তাদের ব্যাটিং দিয়ে এই দূর্বলতা ঢেকে দিয়েছিলেন। এবারও বলা হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপ আছে ভারতের কিন্তু আমার কাছে এই ব্যাটিং লাইন আপে কোহলি ছাড়া আর কাউকেই চোখে পড়ে না। রাহানে , রোহিত শর্মারা চেষ্টা করছেন মাঝে মাঝে সফলও হচ্ছেন , ধোনি তো নিভু নিভু করে জ্বলছেন। তবে ব্যাটিংয়ে কিছু করতে হলে কোহলিকেই করতে হবে। শচীনের রেকর্ড ভাঙ্গার একমাত্র এই যোগ্যতা সম্পন্ন খেলোয়ারটি বিশ্বকাপের মত আসরে নিজেকে অবশ্যই মেলে ধরতে চাইবেন । একজন গ্রেট ব্যাটসম্যান হওয়ার মত সব যোগ্যতাই তার আছে। তবে কথা সেই আগেরটাই এক কোহলিতে আর কতদূর ।
শ্রীলংকাঃ লংকানদের নিয়ে বেশি কিছু বলব না , শুধু বলব এরা প্রকৃত ফাইটার । সেমি ফাইনালের চতুর্থ দল হতে পারে তারাও । তবে তাদের ভাল করা নির্ভর করবে জয়া,সাঙ্গা,ম্যাথুস আর মালিঙ্গার উপর। নিশ্চিত থাকেন নিজেদের শেষ বিশ্বকাপ হিসেবে তারা একটুও ছেড়ে কথা বলবে না ।

বাংলাদেশঃ নিজের দেশকে নিয়ে কিছু তো অবশ্যই বলতে হবে। কোনভাবে যদি বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায় তবে উপরের লেখা গুলো নিয়ে কে চিন্তা করতে যাবে বলুন । তবে আবেগ আর যুক্তি বিপরীতধর্মী তাই যুক্তি বলছে সেটা সম্ভব নয় । তা না হোক আমরা আমাদের সম্ভবনা নিয়ে কথা বলতেই পারি । বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ে আমার কিছু বলার নাই , আমার কাছে বাংলাদেশের বোলিং সব সময়ই ভাল নম্বর পেয়ে আসে। এমনকি আমার এটাও মনে হয় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যদি গড়ে প্রতিটি ম্যাচে ২৭০ -২৮০ রান করে করত তবে এই টি টুয়েন্টির যুগেও যে কোন দলের বিপক্ষে শতকরা ৬০ ভাগ ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা আমাদের বোলারদের আছে, অন্তত নিজেদের কন্ডিশনে । তাই বাংলাদেশের ভাল করা আর না করাটা নির্ভর করছে ব্যাটসম্যানদের উপর । আমাদের সাফল্য একক নৈপূন্য নয় বরং দলীয় সামর্থের উপর আমরা নিভরশীল । তবে আমি এখনও মনে করি তাইজুলের পরিবর্তে রাজ্জাকের টিম থাকা উচিত ছিল । সাকিব , তামীম, মুশফিক তো আছেই, মাহমুদ্দৌলাও ভাল করবে তবে আমি আলাদা করে ব্যাটিংএ এর মামিনুল ও বোলিংয়ে রুবেল এর ভাল করার ব্যাপারে আশাবাদী। সুপার এইট এ যাওয়ার মত কল্পবিলাসী হতে ইচ্ছুক নই , তাই আমার চাওয়া লড়াই করে দেশের সম্মান বজায় রাখা সাথে দুটি জয় ! সেটা হতে পারে যে কোন দলের বিপক্ষেই ।


ইমরান হাশমির মত ক্রিকেটে আমার প্রেডিকশন সত্যি হওয়ার হাড়টা একটু বেশিই । যদিও আমি এইটা অন্য কোন কাজে লাগাই না। তবে গতবার টিটুয়েন্টি বিশ্বকাপে বলেছিলাম ওয়েষ্ট ইন্ডিজ এর কথা আর দ্যাখেন তারা ক্যামনে যেন চ্যাম্পিয়নও হয়ে গেল । দেখা যাক এবার নিউজিল্যান্ড আমার মান রাখতে পারে কিনা ????